পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা হল মেসোপটেমীয় সভ্যতা। শুধু প্রাচীন নয় গুরুত্বপূর্ণও বটে। এই সুপ্রাচীন মেসোপটেমিয়া বর্তমান সময়ের যে অঞ্চলে ইরাক ও সিরিয়া আছে এই অঞ্চলে অবস্থিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এই সভ্যতা শুধু সভ্যতা না, এটা একটি জমাট বাধা ইতিহাস, জীবনের কথা, মানব ইতিহাসের উত্থান পতনের গাথা। আমরা সবায় জানি ‘মেসোপটেমিয়া (Mesopotamia)’ কথাটির অর্থ, দু’নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল। মেসো অর্থ দুই এবং পটেমিয়া অর্থ নদী। ইরাকের দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থানই হল মেসোপটেমীয় সভ্যতা।
![]() |
![]() |
মেসোপটেমীয় সভ্যতার অবদান
![]() |
ধর্ম ও দর্শন: ধর্ম পালনের দিক দিয়ে এই সভ্যতার মানুষেরা অগ্রগামী ছিলো। প্রতিটি জিগুরাট ও মন্দিরেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ অভিজাত শ্রেণী, দরিদ্র শ্রেণী, ব্যবসায়ী, কামার, মজুর বা কৃষক ইত্যাদি যাই বলিনা কেনো, প্রতিটা শ্রেণীর লোকেদের বসার ব্যাবস্থা ছিল। এসব লোকজন নিজ নিজ জায়গায় গিয়ে নগরদেবতাদের প্রণামভক্তি ও বিভিন্ন জিনিস উৎসর্গ করত (পরে ইসলামের অনুসারীরা এসে ইসলামী উপাসনাগৃহ তৈরি করে, ইসলামিক নিয়ম কানুন চালু করে)। এতে এই সভ্যতার সার্বজনীন ধর্ম ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। এই একই সভ্যতা পেগান, খ্রিষ্টান, ইহুদী এবং সর্বশেষ ইসলাম এর আগমনের সাক্ষী হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: সেই সময়কার সময়কাল বিচারে মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা উন্নত কৃষিবিদ ছিলো। গণনার জন্য পাহাড়ের গায়ে দাগ কেটে কেটে সংখ্যা মনে রাখার চেষ্টা করত। আর এভাবে গণনার সুবিধা জনক পদ্ধতি বিকশিত হয়। এবং তারা গনিত শাস্ত্রের উন্নতিসাধন করতে সক্ষম হয়।মেসোপটেমীয় সভ্যতার সংখ্যাগুলি ষষ্ঠিক বা ষাট (৬০) কেন্দ্রিক ছিলো (গ্রিক জাতির সাথে কিছুটা মিলে যায়)
ভাষা ও সাহিত্য: তাদের ভাষা ছিলো সেমিটিক ভাষা।তারা তাদের প্রাত্যহিক – দৈনন্দিন ভাবের আদান প্রদান সহ বিজ্ঞানচর্চা, প্রশাষনিক কাজে, যোগাযোগের এবং ধর্মকর্ম পরিচালনা করত। এমন কি গ্রীক লেখক হোমার তার ইলিয়াড এবং ওডেসি লেখার হাজার বছর পূর্বেই সুমেরীয়রা তাদের নিজস্ব ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিল এবং এর নাম ছিল গিলগামেশ। এই সাহিত্য থেকে যানা যায় যে এখানকার লোকজন মাত্রাতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ ছিলো। আর যে জাতীর কল্পনা ক্ষমতা ভালো তারা বিজ্ঞানে এগিয়ে যাবে এবং এই সভ্যতা তা করেও দেখিয়েছে।
অন্যান্য অবদানের মধ্যে আছে দফতরীয় দলিল যা আজ দেখতে পাওয়া যায় আমাদের জীবন ব্যবস্থায়, তা সুমেরীয়দের মধ্যেই প্রথম দেখা যায়।
পৃথিবীতে অনেক সভ্যতা এসেছিলো এবং চলেও গেছে। কিন্তু কিছু সভ্যতা ইতিহাসের পাতায় তার স্থান করে নিয়েছে। আর এর মধ্যে অন্যতম হল এই মেসোপটেমীয় সভ্যতা। এই সভ্যতা যেমন অনেক উপাখ্যানের জন্ম দিয়েছে ঠিক এর আভিজাত্যের জন্য সংঘাতের সাক্ষীও হয়েছে। আমরা সবায় বাগদাদের খলিফা হারন-আর-রশিদের কথা জানি। এই শাসক মেসোপটেমীয় সভ্যতার উপর তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলো।


