মেসোপটেমীয় সভ্যতা: বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস

0

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা হল মেসোপটেমীয় সভ্যতা। শুধু প্রাচীন নয় গুরুত্বপূর্ণও বটে। এই সুপ্রাচীন মেসোপটেমিয়া বর্তমান সময়ের যে অঞ্চলে ইরাক ও সিরিয়া আছে এই অঞ্চলে অবস্থিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এই সভ্যতা শুধু সভ্যতা না, এটা একটি জমাট বাধা ইতিহাস, জীবনের কথা, মানব ইতিহাসের উত্থান পতনের গাথা। আমরা সবায় জানি ‘মেসোপটেমিয়া (Mesopotamia)’ কথাটির অর্থ, দু’নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল। মেসো অর্থ দুই এবং পটেমিয়া অর্থ নদী। ইরাকের দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থানই হল মেসোপটেমীয় সভ্যতা।

মেসোপটেমীয় সভ্যতা
আমরা আনেকেই মনে করি যে মেসোপটেমীয় সভ্যতা দ্বারা শুধু একটি সভ্যতা কে বোঝায়। আসলে মেসোপটেমীয় সভ্যতা দ্বারা সুমেরীয়, ব্যাবলনীয়, অ্যাশেরীয় ও ক্যালেডীয় সভ্যতা কে বোঝায়। তৎকালীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা গড়ে উঠে ইরাকের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস বা ফোরাত ও দজলা নদীর অববাহিকায়। যা আজো বহাল তবিয়তে আছে যদিও গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। সেচ নির্ভর প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ইরাকের অপর নাম ছিলো। এখনো ‘মেসোপটেমিয়া সভ্যতা’ শব্দ ইরাক কে নির্দেশ করে।

মেসোপটেমীয় সভ্যতার ম্যাপ
প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের (খ্রিস্টপূর্ব অর্থ হযরত ঈশা আ: এর জন্মের পুর্বে) মেসোপটেমিয়ায় অতি উন্নত এক সভ্যতার উম্মেষ ঘটেছিল, যা আজো আপার বিস্ময়! সভ্যতার আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এই সভ্যতা চার চারটি অন্যান্য সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলো। আর এই বিস্ময়কর মেসোপটেমীয় সভ্যতা মিশরীয় সভ্যতার থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল।

দ্বিতীয় শতকের শুরুর দিকে পার্সিয়ানরা (ইরানিরা) এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের হাতে নেয় এবং সুদীর্ঘ সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত এই অঞ্চল তাদের শাসনে থাকে। এই সময় এই সভ্যতার উপর ব্যাপক পার্সিয়ান প্রভাব পরে। এরপর মুসলিম শাসনামল শুরু হয় এবং এই সভ্যতা ইসলামের রাজধানী রূপের আত্মপ্রকাশ করে পুরো বিশ্বময় আধিপত্য করে। পরে  মুসলিম খিলাফত শাসনে যখন এই অঞ্চলে স্থায়ী হয় তখন এই স্থানের নাম পরবর্তীতে ইরাক নামে পরিচিতি লাভ করে। সম্পদে পরিপূর্ণ ছিলো বিধায় বহিঃশত্রুদের থেকে খুব একটা সুরক্ষিত ছিলনা এবং বারবার এর উপর আক্রমণ চলতে থাকে এবং লুট রাজ কায়েম করে!

মেসোপটেমীয় সভ্যতার অবদান

মেসোপটেমীয় সভ্যতার অবদান

ধর্ম ও দর্শন: ধর্ম পালনের দিক দিয়ে এই সভ্যতার মানুষেরা অগ্রগামী ছিলো। প্রতিটি জিগুরাট ও মন্দিরেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ অভিজাত শ্রেণী, দরিদ্র শ্রেণী, ব্যবসায়ী, কামার, মজুর বা কৃষক ইত্যাদি যাই বলিনা কেনো, প্রতিটা  শ্রেণীর লোকেদের বসার ব্যাবস্থা ছিল। এসব লোকজন নিজ নিজ জায়গায় গিয়ে নগরদেবতাদের প্রণামভক্তি ও বিভিন্ন জিনিস উৎসর্গ করত (পরে ইসলামের অনুসারীরা এসে ইসলামী উপাসনাগৃহ তৈরি করে, ইসলামিক নিয়ম কানুন চালু করে)। এতে এই সভ্যতার সার্বজনীন ধর্ম ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। এই একই সভ্যতা পেগান, খ্রিষ্টান, ইহুদী এবং সর্বশেষ ইসলাম এর আগমনের সাক্ষী হয়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: সেই সময়কার সময়কাল বিচারে মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা উন্নত কৃষিবিদ ছিলো। গণনার জন্য পাহাড়ের গায়ে দাগ কেটে কেটে সংখ্যা মনে রাখার চেষ্টা করত। আর এভাবে গণনার সুবিধা জনক পদ্ধতি বিকশিত হয়। এবং তারা গনিত শাস্ত্রের উন্নতিসাধন করতে সক্ষম হয়।মেসোপটেমীয় সভ্যতার সংখ্যাগুলি ষষ্ঠিক বা ষাট (৬০) কেন্দ্রিক ছিলো (গ্রিক জাতির সাথে কিছুটা মিলে যায়)

ভাষা ও সাহিত্য: তাদের ভাষা ছিলো সেমিটিক ভাষা।তারা তাদের প্রাত্যহিক – দৈনন্দিন ভাবের আদান প্রদান সহ বিজ্ঞানচর্চা, প্রশাষনিক কাজে, যোগাযোগের এবং ধর্মকর্ম পরিচালনা করত। এমন কি গ্রীক লেখক হোমার তার ইলিয়াড এবং ওডেসি লেখার হাজার বছর পূর্বেই সুমেরীয়রা তাদের নিজস্ব ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিল এবং এর নাম ছিল গিলগামেশ। এই সাহিত্য থেকে যানা যায় যে এখানকার লোকজন মাত্রাতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ ছিলো। আর যে জাতীর কল্পনা ক্ষমতা ভালো তারা বিজ্ঞানে এগিয়ে যাবে এবং এই সভ্যতা তা করেও দেখিয়েছে।

অন্যান্য অবদানের মধ্যে আছে দফতরীয় দলিল যা আজ দেখতে পাওয়া যায় আমাদের জীবন ব্যবস্থায়, তা সুমেরীয়দের মধ্যেই প্রথম দেখা যায়।

পৃথিবীতে অনেক সভ্যতা এসেছিলো এবং চলেও গেছে। কিন্তু কিছু সভ্যতা ইতিহাসের পাতায় তার স্থান করে নিয়েছে। আর এর মধ্যে অন্যতম হল এই মেসোপটেমীয় সভ্যতা। এই সভ্যতা যেমন অনেক উপাখ্যানের জন্ম দিয়েছে ঠিক এর আভিজাত্যের জন্য সংঘাতের সাক্ষীও হয়েছে। আমরা সবায় বাগদাদের খলিফা হারন-আর-রশিদের কথা জানি। এই শাসক মেসোপটেমীয় সভ্যতার উপর তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলো।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top